‘ভালো উইকেটে’ না খেলতে পারায় টাইগারদের এই হাল!
ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সকল ফরম্যাটেই পৃথিবীর যে কোনো দলকে চোখে চোখ রেখে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এখানেই। তবে রাষ্ট্রের বাইরে খেলতে গেলে এবং তেমনটি দেখা যায় না। ফলে বড় বড় টুর্নামেন্ট থেকে ফিরতে হয় ব্যর্থত হয়ে।
মূলত এর কারণ কী? বিচিত্র সময় রাষ্ট্রের মাটির বাইরে টাইগাররা ব্যর্থ হয়ে অভিযোগ করে রাষ্ট্রের মাটিতে ভালো উইকেট না পাওয়ার বিষয়ে। তবে এটাই বাইরে খেলতে কি বাংলাদেশের দলের আশানুরূপ ফল না পাওয়ার রহস্য? ঘরের মাটিতে খেলোয়াড়দের ভালো উইকেট না পাওয়ার আক্ষেপ প্রচুর পূর্বে থেকেই। এই জায়গায় শুধু নিজেদের সাফল্য ধরে রাখতেই তৈরি হয় স্লো উইকেট।
যেখানে ব্যাটারদের থেকে বোলারদের দাপট দেখা যায় বেশি। তবে রাষ্ট্রের বাইরে গেলেই দলের পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে। কারণ ওখানে দলের সাথে থাকেন না অদৃশ্য সেই উইকেট চিটকোড। তবে এই মুহূর্তে খেলোয়াড়ররাও চায় ভালো ম্যাচ খেলতে, অনুশীলন করতে।
এর পূর্বে ভালো উইকেটে খেলতে চান বলে দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, তারকা পেসার তাসকিন আহমেদসহ প্রচুর সিনিয়র ক্রিকেটার জানিয়েছিলেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো দলের আরেক ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। গত পরশু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর খবর সম্মেলনে এসে ভালো উইকেটে খেলার আকুতি জানান এই ব্যাটার।
ভারতে চলমান এই বিশ্বকাপে যে ব্যাটাররাই দলের প্রধান হাতিয়ার হবে এই বিষয়টি পূর্বে থেকেই অনুমেয় ছিল।
এখানের প্রতিটা স্টেডিয়াম ব্যাটিং সহায়ক। এই জায়গায় ৩০০ রানের নিম্নে সংগ্রহ নিয়ে যে কোনো দলকেই চ্যালেঞ্জ জানানো অগ্নিপরীক্ষার সমান। অতএব সকল দলই বড় সংগ্রহ করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালায় ম্যাচে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের বেলায়।
তারা ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নেমেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যান প্রতি ম্যাচে, তবু রক্ষা হয় না; তাদের রান পাওয়া তো অনেক দূরের বিষয়।
আসরের প্রথম ম্যাচে ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েই জিতেছিলেন টাইগাররা। সে সময় শোনা গিয়েছিল মিরপুরের উইকেটের সাথে সেখানকার উইকেট সঙ্গতি রয়েছে। যদিও একই মাঠে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় হার দেখে তারা। তবে আসরের পরের দুটি ম্যাচ ছিল চেন্নাই ও পুনেতে। এই দুটি মাঠই ছিল ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্য তবে ব্যর্থ টাইগাররা। বিশ্বকাপে টাইগারদের কেন—এই হাল অবশেষে জানালেন টাইগার ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত।
চলমান বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নিজেদের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে গত পরশু স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল।
এদিন পূর্বে ব্যাট করতে নেমে টাইগার ব্যাটাররা শুরুটা ভালো করলেও মিডল অর্ডারে ধসে পড়েছে। এবং সেখানেই তাদের হাত থেকে ম্যাচ ছুটে গিয়েছে। ইতি অবদি কোনো মতে টেনে টুনে ২৫৬ রান করতে উপযোগী হয় বাংলাদেশ। জবাবে পুনের ব্যাটিং দেশে কীভাবে ব্যাট করতে হয় দেখান স্বাগতিকরা।
ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল পরে বিরাট কোহলি এই তিন ব্যাটারের প্রদর্শনীতেই সহজেই ৫১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেন স্বাগতিকরা। এবং এমন হারের পরই টাইগারদের এ ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা শান্ত আকুতি জানান ঘরের মাটিতেও ভালো উইকেটে অনুশীলন ও ম্যাচ খেলার।
বলেন, ‘আমার মনে হয় মোদের ভালো উইকেটে খেলা উচিত। ভালো উইকেটে অনুশীলন করা উচিত। এইরকম স্পোর্টিং উইকেটে, যে অভ্যাসটা মোদের তুলনামূলক কম। এই জায়গায় আসলে স্কিলের থেকে মানসিক দিকটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এ দায়িত্বটা নেওয়া উচিত, কারণ এ ধরনের বোলারদের সামলানোর স্কিল সবারই আছে। অতএব এই জায়গায় যদি মোরা একটু নজর দিই, তাহলে পূর্বে এই ভ্রান্তি এবং হবে না।’
মূলত ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আরম্ভ করে বিপিএল অথবা ইন্টারন্যাশনাল কোনো সিরিজ, বাংলাদেশ নিজেদের কন্ডিশনের দোহাই দিয়ে খেলে মন্থর উইকেটে। এমন উইকেটে খেলে ব্যাটারদের বড় শট খেলার ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যায়। এর পূর্বে মিরপুরের উইকেট নিয়ে একবার তো সাকিব আল হাসান বলেই দিয়েছিলেন, ‘এমন উইকেটে টানা কয়েকটা সিরিজ খেললে ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এছাড়া ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে তাসকিন আহমেদ মিরপুরের উইকেট নিয়ে বচন বলেছিলেন।
সেই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নেমে মাত্র ৮৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। পরে এমন ব্যর্থতার বিষয়ে তাসকিন বলেছিলেন, ‘এখানকার উইকেট (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের) মিরপুরের চেয়ে ভিন্ন। প্রচুর স্পোর্টিং। ভবিষ্যতে আরও ভালো উইকেটে খেলা হলে মোদের বোলিং-ব্যাটিং দুটিতেই আরো উন্নতি হবে। ভবিষ্যতে ভালো উইকেটে খেললে ফল যা-ই হোক, বড় ইভেন্টগুলোয় সুবিধা হবে।’ সেই অভিযোগ গুলোর পরও উন্নতি ঘটেনি। এবার কি শান্তর ঘরের মাটিতে ভালো উইকেটে খেলতে চাওয়া পূরণ হবে নাকি দেখার বিষয়।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url