আলু-ডিম-পেঁয়াজে আগুন, সবজি কিনতেই নাকাল ক্রেতা

 


সবজি কিনতে এই মুহূর্তে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কোন সবজি কিনবেন তা নিয়ে কপালে যেন দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে! কারণ, কাঁচকলা ও পেঁপে বাদে এবং সকল সবজির দামই এই মুহূর্তে নাগলের বাইরে। এর মধ্যে কয়েকটি সবজির কেজি ১০০ টাকাপয়সা পেরিয়ে গেছে। 

এ অবস্থায় সবচেয়ে প্রচুর বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। মাছ-মাংস নয়, সবজি কেনাই এই মুহূর্তে তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সরকার দর বেঁধে দিয়েও ডিম, আলু ও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে তিনটা পণ্যই প্রচুর প্রচুর দামে বিক্রি হচ্ছে। 

ভোক্তাদের প্রশ্ন? তাহলে দর বেঁধে দিয়ে কী লাভ হলো? ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কয়েক বছরে সবজির দাম এতটা বাড়েনি। মূলত, খারাপ আবহাওয়ার ফলে রাষ্ট্রের প্রচুর জায়গায় আগাম সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজধানীর বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে।

  এই মুহূর্তে শীতকালীন সবজি পুরোদমে বাজারে আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট, কাওরানবাজার ও তুরাগ এলাকার আধুনিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। সবজি কিনতে ক্রেতাদের এক দোকান থেকে আরেক দোকান ঘুরে দরদাম করতে দেখা গেছে। 

গতকাল বাজারে বিচিত্র ধরনের সবজির মধ্যে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০ থেকে ১৪০, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, আধুনিক শিম ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মুলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ও ঢ্যাঁরশ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুমুখী ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করল্লা ৯০ থেকে ১১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকাপয়সা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া কম দামের সবজির মধ্যে পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকাপয়সা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবং কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। 

একটি লাউ আকারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকাপয়সা ও ছোট আকারের একটি ফুলকপি, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রোজ কৃষিপণ্যের খুচরা দর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। তাদের সেই প্রতিবেদনের খবর বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি বেগুনের দাম ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, কাঁচা পেঁপে ৪০ শতাংশ, মিষ্টি কুমড়া ২০ শতাংশ, করল্লা/উচ্ছে ৪২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, পটোল ১১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ঢ্যাঁরশ ৫২ দশমিক ৩৮ শতাংশ, লাউ ৫০ শতাংশ, চিচিঙ্গা ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, কাঁচা মরিচ ১৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ দাম বেড়েছে। সবজির এই চড়া দামে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা কবিরুল ইসলাম বলেন, সবজির এত প্রচুর দাম এর পূর্বে কবে ছিল জানি না। 

উনি বলেন, সবজি কিনইে মোদের মতো মধ্যবিত্ত মানব হিমশিম খাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান শিক্ষক বলেন, রাষ্ট্রের প্রচুর জায়গায় বৈরী আবহাওয়ার ফলে শীতকালীন আগাম সবজিখেত নষ্ট হয়ে গেছে। যা প্রভাব পড়েছে বাজারে। উনি বলেন, শীতকালীন সবজি বাজারে আসা আরম্ভ হলেই দাম কমে যাবে। দর বেঁধে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ডিম, আলু ও পেঁয়াজের বাজার সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৪ সেপ্টম্বর ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দর গণনা করে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। 

উলটো দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। তবু পণ্য তিনটির উত্পাদন খরচ ও মুনাফাযুক্ত করেই দর গণনা করা হয়েছিল। নির্ধারিত দর অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকা, ডিমের হালি ৪৮ টাকাপয়সা ও দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকাপয়সা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের বিপণন দল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের প্রতিবেদনের খবর বলছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকাপয়সা ও ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের খবর অনুযায়ী, এই দর গত এক বছরের ব্যবধানে আলুতে ৭২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, দেশি পেঁয়াজে ৯০ দশমিক ৪৮ শতাংশ দাম বেশি। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকাপয়সা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে যা ৫০ শতাংশ প্রচুর দাম। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, প্রান্তিক খামারিরা রাজধানীর কয়েকটি বাজারে প্রত্যেকটি ডিম ১২ টাকায় বিক্রি আরম্ভ করেছে। কিন্তু এ খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে না আসলে সুফল পাওয়া যাবে না।

  উনি বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে উদ্যোগটা তাদের নিতে হবে। এছাড়া, ফিডে অনেক মুনাফা করছে ফিড মিলগুলো। ট্যারিফ কমিশন ফিডের দর নির্ধারণে কার্য করছে। ফিডের দাম কমলে ডিমের দাম এমনিতেই কমে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে উনি বলেন, দেশি পেঁয়াজের মজুত এই মুহূর্তে শেষের দিকে। রাষ্ট্রের হাটবাজারগুলোতেই দেশি পেঁয়াজের কেজি এই মুহূর্তে ৮০ টাকা। কিন্তু সমস্যা হলো দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাতো বাড়ার বচন না। আসলে এই চক্রের সাথে কীভাবে পারবেন?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url