পশ্চিমাদের ভণ্ডামোর কারণেই ফিলিস্তিনে এই পরিস্থিতি

 

ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। নতুন করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাতে জড়ানো, গাজায় মানবিক সংকট তৈরি হওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হওয়া নতুন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাফসান গালিব

তানজীমউদ্দিন খান: এর আসলে অনেকগুলো কারণ আছে। ২০০৭ সালের পর থেকে গাজা একধরনের অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। শুধু একটাই করিডর তারা ব্যবহার করতে পারে, যেটি মিসরের সঙ্গে, তা–ও খুব সীমিতভাবে। ছিটমহলে পরিণতে হয়ে গাজা হয়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল, সমস্যাসংকুল ও অমানবিকভাবে বসবাসের একটি অঞ্চল।

ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন হওয়া, তাঁর মন্ত্রিসভায় যখন চরম ডানপন্থী নেতৃত্ব থাকে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় অথবা অবৈধ সেটেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিরা থাকেন, তখন ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে, তা বোঝাই যায়। এখন তো সেটি আরও স্পষ্ট, ফিলিস্তিনিদের তাঁরা চিহ্নিত করেছেন ‘হিউম্যান অ্যানিমেল’ হিসেবে।

আবার মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক বছর আগে থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের একটি প্রচেষ্টা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়। আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব আমিরাত, বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চুক্তি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবেরও সেখানে যুক্ত হওয়ার একটি প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছিল। আবার ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিও ফিলিস্তিনিদের আরও স্পর্শকাতর করে তোলে।

 গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যের একটি নতুন মানচিত্র দেখান। সেই মানচিত্রে গাজা ও পশ্চিম তীরের কোনো অস্তিত্বই নেই। এর মধ্য দিয়ে পুরো ফিলিস্তিনের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়। সেখানে তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়, সৌদির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন একটি মানচিত্র তৈরি হচ্ছে।

একই সঙ্গে এ বছরের পরিসংখ্যান যদি আমরা দেখি, প্রায় প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিরা হত্যার শিকার হচ্ছে। হামাসের হামলার আগপর্যন্ত সেটি ছিল প্রায় আড়াই শ। প্রতিবছরই এমন চিত্র আমরা দেখতে পাই। এই সবকিছু মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক ক্ষোভ তৈরি হয়। তাদের কাছে মনে হচ্ছিল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তারা পরিত্যক্ত। সবকিছু মিলিয়ে পিএলওর চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় হামাসের ওপর অভ্যন্তরীণ একটি চাপ তৈরি হয় ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানটা স্পষ্ট করার। যার ফলে হামলাটা আমরা দেখতে পেলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url