ভালো রাষ্ট্রব্যবস্থা চাইলে ভালো শিক্ষাব্যবস্থা চাই
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার অতি মুমূর্ষু দশা। মুমূর্ষুকে বাঁচাতে প্রথমে যেমন দ্রুত তার সমস্যা শনাক্ত করতে হয়, তেমনি দ্রুততার সঙ্গে তাকে সঠিক দাওয়াইটাও দিতে পারতে হয়। এ দুটি কতটা সঠিক ও দক্ষতার সঙ্গে করা সম্ভব হচ্ছে, তার ওপরই নির্ভর করছে দেশের শিক্ষার ঘুরে দাঁড়ানো অথবা মৃত্যুর দিকে আরও এগিয়ে যাওয়া। ভালো রাষ্ট্রব্যবস্থা করতে হলে ভালো শিক্ষাব্যবস্থা করতে হবে।
অভ্যুত্থান পর্যালোচনা প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই গণপরিসর’ আয়োজিত ‘অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ: শিক্ষা নিয়ে কিছু প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটারের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, আলেম ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান তাঁর বক্তব্যে মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ১২ বছরব্যাপী শিক্ষা অথবা শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগপর্যন্ত বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক ইত্যাদি বিভাগ) হওয়া উচিত নয়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো আবাসিক করা, মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো, শিক্ষকদের জন্য বেতন কমিশন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ভালো রাষ্ট্রব্যবস্থা করতে হলে ভালো শিক্ষাব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচনা সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন লেখক রাখাল রাহা। তাতে তিনি শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যেকোনো খাতের পতিত দশা থেকে উদ্ধারের জন্য অন্তত চারটি ধাপে ভাবতে হয়। এগুলো হলো জরুরি, স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি।
শিক্ষার বিভিন্ন ধারায় বিপুল শিক্ষার্থী থাকার কথা উল্লেখ করে রাখাল রাহা বলেন, শিক্ষা নিয়ে যেকোনো ভাবনা বা পরিকল্পনা এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও তাদের ধারা-উপধারার কথা মনে রেখে ভাবতে হবে। শিক্ষা নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালিত ও সমাজ পরিচালিত শিক্ষার নানা স্তরের বিরাজমান শিক্ষা পরিস্থিতিটি বোঝা জরুরি। এ দেশের স্কুল, কলেজ, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি, রাষ্ট্র পরিচালিত বা সমাজ পরিচালিত সবই এ দেশের এবং এখানে যারা পড়ছে, তারা এ দেশেরই নাগরিক বা ভবিষ্যৎ নাগরিক। সুতরাং সব ধারার শিক্ষাকে তার বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই মানসম্মত হতে হবে, সেখানে শিক্ষার্থীর জীবন নিরাপদ হতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশ অনুকূল হতে হবে।
ঘন ঘন নতুন পাঠ্যবই রচনার সমালোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম।
আলেম ও লেখক মনযুরুল হক বলেন, যদি বৈষম্যহীন শিক্ষা চান, তাহলে কেউ মাদ্রাসায় পড়লেই বা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হলেই তাকে আউটসাইডার (বাইরের কেউ), জঙ্গি বলা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তুহিন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান, এক্সেল একাডেমির অধ্যক্ষ জিনাত আফসানা, আলেম ও লেখক মুসা আল হাফিজ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url