শিশুর এই রোগকে অনেকে জন্ডিস ভেবে ভুল করেন
বিটা ক্যারোটিন আমাদের অন্ত্রের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ায় সক্রিয় ভিটামিন এ–তে রূপান্তরিত হয়। যদি শিশুর রক্তে এই বিটা ক্যারোটিন উপাদান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তখন এটিকে ক্যারোটেনেমিয়া বলা হয়। এ রোগের কারণে শিশুর শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। অনেকে একে জন্ডিস ভেবে ভুল করে থাকেন। তবে শিশুর চোখ স্বাভাবিক থাকে, চোখে কোনো হলুদ ভাব থাকে না। সিরাম বিলিরুবিন পরীক্ষা করালেও তা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকে।
অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে তা দেহের ফ্যাট টিস্যুতে জমা হয়। এপিডার্মিসের বাইরের স্তরে ক্যারোটিনয়েড জমা হওয়ায় ত্বকে হলুদ বা কমলা রঙের আভা দেখা দিতে পারে, যা ক্যারোটেনেমিয়া বা ক্যরোটিনোডার্মিয়া নামে পরিচিত।
কেন হয়
শরীরের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে;
অন্ত্রে কোনো কারণে বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ–তে পরিবর্তিত না হলে;
শিশু আগে থেকেই অপুষ্টির শিকার হলে;
শিশুর অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কম থাকলে;
শিশু সুষম খাবারে অভ্যস্ত না হলে।
শিশুর রক্তে বিটা ক্যারোটিন উপাদান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে তাকে ক্যারোটেনেমিয়া বলা হয়।
চিকিৎসা
শুধু ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার একটু কম খেলে বা দুই থেকে তিন মাস বাদ দিলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ক্যরোটেনিমিয়া সাধারণত টক্সিক নয়, এটি একটি নিরীহ প্রকৃতির রোগ। এর বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিও নেই।
কিছুদিন বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বন্ধ করলেই দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই শিশুর ত্বকের বর্ণ আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে।
অপরিশোধিত পাম অয়েল বিটা ক্যারোটিনের খুব সমৃদ্ধ উৎস। এ ছাড়া হলুদ ও কমলা রঙের ফল, যেমন আম, আনারস, পাকা পেঁপে এবং সব বেরিজাতীয় ফল বিটা ক্যারোটিনের ভালো উৎস। মিষ্টিকুমড়া, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলুতেও বেশি বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়। পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, রঙিন ক্যাপসিকাম, মিষ্টি আলুর পাতাও বিটা ক্যারোটিনের খুব ভালো উৎস। তাই এসব খাবার কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে।
সতর্কতা
শিশু একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের খাবার খেতে পছন্দ করতেই পারে, কিন্তু তাকে প্রতিদিন একই খাবার দেওয়া যাবে না। খাবারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তাই প্রতিদিন বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার না দিয়ে অন্যান্য শাকসবজিও খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।
শিশুর ক্যারিটিনোডার্মি না থাকলে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার দেবেন। আপনি যদি ভয় পেয়ে এ ধরনের খাবার ও শাকসবজি খাওয়ানো বন্ধ করে দেন, সে ক্ষেত্রে শিশুর শরীরে ভিটামিন এ–র ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url