ছাত্র আন্দোলন: রবীন্দ্রসরোবর ও শহীদ মিনারে শিল্পীরা যা বললেন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সংহতি জানালেন সংগীতশিল্পী, নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। শনিবার বেলা তিনটায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে ‘গেটআপ, স্ট্যান্ডআপ’ ব্যানারে নেমেছিলেন ব্যান্ড ও একক সংগীতশিল্পীরা।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে শিল্পীরা আছেন জানিয়ে হামিন আহমেদ বলেন, ‘আর যেন একটা গুলিও না চলে, একটা জীবনও যেন না যায়। যাদের ধরপাকড় করা হয়েছে, তাদের যেন অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
সহিংসতায় নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে হামিন আরও বলেন, ‘যে জীবনগুলো গেছে, তা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং বিচার হবে।’
মাকসুদুল হক বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের সঙ্গে আছি। আমরা সমস্ত অন্যায়, নিপীড়ন বন্ধ চাই। জুলুম বন্ধ চাই। যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়া হোক। দেশে শান্তি আসুক।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কোনো আতঙ্ক গুনি না; আমরা কিছুকে ভয় পাই না। আপনারা বেরিয়ে আসুন; একটু সময় লাগলেও বেরিয়ে আসুন। প্রতিটা টিভিকে বলছি, আপনারা নিজ দায়িত্ব পালন করুন। সহজ ভাষায় কথা বলবেন, দফা এক দাবি এক।’
প্রিন্স মাহমুদ প্রশ্ন করেন, ‘যদি আন্দোলন মেনেই নেন এখন, গতকাল কেন গুলি চালালেন? আমার খুলনা শহর কেন রক্তে লাল হলো? এই দুর্বিষহ অবস্থা কেন সৃষ্টি করলেন? বলেন, কেন করলেন?’
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শাকিব চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বন্দুক দিয়ে আমাদের ছাত্র, আমাদের জনতা মারা হচ্ছে; এটা ’৫২, ’৬৯-এ হয়েছিল, ’৭১ সালে পাকিস্তানিরা মেরেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে; এখানে কি গৃহযুদ্ধ হচ্ছে? আমরা কি শত্রু? ছাত্ররা কি শত্রু?’
শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শাকিব আরও বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা ছাত্রদের দাবির সঙ্গে আছি।’
একজন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমাদের এত দিন (প্রতিবাদ জানাতে) লাগল কেন? কারণ, আমরা ভয় পাই। এই সরকারকে আমরা ভয় পাই। ছাত্ররা আমাদের ভয় ভেঙে দিয়েছে।’
রবীন্দ্রসরোবরে সংহতি জানানোর পর বিকেল পাঁচটার দিকে বেঙ্গল শিল্পালয়ের সামনেও ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছেন মাকসুদুল হক, হামিন আহমেদরা। আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন তাঁরা।
বেঙ্গল শিল্পালয়ের সামনে মাকসুদুল হক বলেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। আমরা গুলি দেখছি, হত্যা দেখছি, নিপীড়ন দেখছি। মানুষকে ধরে ধরে জেলে ভরা হচ্ছে, তা–ও দেখছি। আমরা আর এসব দেখতে চাই না। যাদের হত্যা করা হয়েছে, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব বন্ধ করুন। ছাত্র-জনতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি আমি।’
ওয়ারফেজের দলনেতা টিপু বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই না। এই নৈরাজ্যের দেশ, এই গুলির দেশ আমরা চাই না। আমরা শান্তিময় দেশ চাই। আর কোনো রক্তপাত চাই না, মায়ের বুক খালি চাই না। যেসব ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, তার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।’
‘এভাবে বাচ্চা কাচ্চারা মারা যাবে, মেনে নেওয়া যায় না। এটি বন্ধ হতে হবে। এর শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে হবে।’, বললেন সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়া।
সংগীতশিল্পী অর্ণব বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের পাশে থাকতে চাই, তাঁদের সমর্থন করতে চাই। ছাত্রদের দাবিগুলো যেন তারা পেতে পারে, তা আমরা চাই। এর জন্য আমাদের শিল্পীদের যা কিছু করার দরকার, আমরা করব।’
র্যাপার হান্নানের মুক্তি দাবি
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘আওয়াজ উডা’ গেয়ে আলোচিত তরুণ র্যাপার হান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে ফতুল্লা থানা-পুলিশ। ২৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ভুইঘর এলাকা থেকে হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তোলার পর তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
হান্নানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে মাকসুদুল হক বলেন, ‘র্যাপার হান্নানের মুক্তি চাই। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি দেখতে চাই।’
অর্ণব বলেন, ‘আমরা শিল্পী, আমাদের কাজ গান করা, ছবি আঁকা। সেটি দিয়েই আমরা প্রতিবাদ করতে পারি, সেটিই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু সেটি যদি আমরা না করতে পারি বা আটকে দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে। হান্নানের মুক্তির দাবি করছি আমরা।’
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url