এডিস মশা কামড়ানোর কত দিন পর জ্বর আসে!




 

এডিস মশা কামড়ানোর কত রোজ পর জ্বর আসে? 

একটা এডিস মশা কত রোজ বাঁচে এবং কত রোজ এটি ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে? ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে কত রোজ এই জীবাণু সক্রিয় থাকে? বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন আগের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে, মৃত্যুর হিসাব পার করেছে হাজারের ঘর- সেসময় অনেকেই যেন মরিয়া হয়ে গুগলে এ প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজছেন। ১. এডিস মশা কামড়ানোর কত রোজ পর জ্বর আসে? ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার খ্যাতি এডিস এজিপ্টি। 

তবে মোদের রাষ্ট্রে এটি ডেঙ্গু মশা নামেই প্রচুর পরিচিত। এডিস মশা কামড়ানোর কারণেই ডেঙ্গু জ্বর হয়। যদিও এই মশা কামড়ানোর পাশে পাশে জ্বর হয় না। রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক ডা. সাবেরা গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে লক্ষ্মণ দেখা দিতে পাঁচ থেকে সাত রোজ সময় লাগে। এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত রোজ মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে। 

এবং এই জ্বর থাকেন পাঁচ থেকে ছয় রোজ পর্যন্ত। ২. আক্রান্ত মানুষ কত রোজ ডেঙ্গু ছড়াতে পারে? অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে কত রোজ এই জীবাণু সক্রিয় থাকে? চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চার রকম সেরোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ আর ডেন-৪। সহজ কথায়, একজন মানব তার সারাজীবনে সর্বোচ্চ চারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ একবার একটি ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর তা সেরে গেলে, তার শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা সারাজীবনের জন্য কার্য করে।

তারপর যদি উনি পুনরায় আক্রান্তও হয়, সেটি হবে ডেঙ্গুর ভিন্ন কোনো ধরন। অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, যত রোজ রক্তে ভাইরাস থাকবে, তত রোজ রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে। কেবলমাত্র রক্ত জীবাণুমুক্ত হলেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায় একজন আক্রান্ত ব্যক্তির। ৩. ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর সারলেই কি উনি সুস্থ? অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারে না। সামান্য শরীর কষ্ট ও একটু জ্বরের লক্ষ্মণ থাকলেও মূলত এ সময় সর্দিকাশিও থাকেন না। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই জ্বর ভালো হয়ে যায়। তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে, অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন আরেকটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে জটিলতা তৈরি হয়। কারণ প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটার পাশে আধুনিক ভাইরাসের অ্যান্টিজেনের এক ধরনের রিয়্যাকশন হয়। যার ফলে হেমোরেজ অথবা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে, ক্ষেত্রবিশেষে পূর্বে অত্যন্ত জ্বর ওঠার পর তা কমে যায়।

 এ সময় অনেকটা সুস্থ বোধ হলেও, এটিই আসলে সবচেয়ে কঠিন পর্যায়। কেননা এ সময়েই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় আর রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ সময় সুস্থ বোধ করায় শিশুরাও খেলাধুলা করতে চায়। তবে এটা একেবারেই করা যাবে না। এই সময়ে যেকোনো ধরনের পরিশ্রমের কার্য থেকে বিরত থাকতে হবে আর পুরা বিশ্রাম করতে হবে। ৪. এডিস মশা কত রোজ বাঁচে? কীটতত্ত্ববিদ শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার বলছেন, একটি পুরা বয়স্ক এডিস মশা গড়ে ১৫ থেকে ৪০ রোজ বাঁচে। মূলত তাপমাত্রার ওপর এডিস মশার আয়ু নির্ভর করে। শীতকালে এডিস মশা প্রচুর বাঁচে, পুনরায় গরমকালে এডিস মশার বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার জলদি হয় বলে এ সময়ে এডিস মশা কম বাঁচে। ৫. এডিস মশা কোন সময় কামড়ায়? এক সময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা কেবল দিনের বেলা কামড়ায়। 


কিন্তু ওই নির্ধারণ এই মুহূর্তে এবং কার্য করছে না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা তার প্রকৃতি বদলেছে। এখন দিনে অথবা রাতে সকল বেলাতেই কামড়াতে পারে এডিস এজিপ্টি, গুরুত্বপূর্ণ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে। ৬. এডিস মশা কতবার কামড়ায়? কীটতত্ত্ববিদ শিক্ষক কবিরুল বাসার বলেন, ল্যাবে করা পরীক্ষায় দেখা গেছে একটি এডিস মশা জীবদ্দশায় গড়ে চার থেকে ছয়বার কামড়ায়। কেবল মাত্র বউ মশাই কামড়ায়। ফলে কেবল বউ এডিস মশাই ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। আর বউ এডিস মশাও কেবল মাত্র পেটে ডিম থাকা অবস্থাতে কামড়ায়। ৭. এডিস মশা কিভাবে বাহক হয়? কতদিন থাকে? 

এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়- এমন একটি ভ্রান্তি নির্ধারণ অনেকের মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে, যা সঠিক নয়। আরেকটি ভ্রান্তি নির্ধারণ হলো আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর পরই সুস্থ একজনকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু জ্বর হবে। কীটতত্ত্ববিদ শিক্ষক কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশার বদলে তখনই একজন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, যখন মশাটি ভাইরাস ইনফেক্টেড বা ভাইরেমিক হবে। একটা এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে যখন ভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী হয় সেসময় একে বলা হয় ভাইরেমিক। মূলত আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর ডেঙ্গু মশাকে ভাইরাস বিস্তারের উপযোগী হতে একটি জীবনচক্র পূরণ করতে হয়। অর্থাৎ আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর বদলে মশার দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। তারপর ডিম পারা আর বংশবিস্তারের বদলে ওই মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে উপযোগী হয়, অর্থাৎ ভাইরেমিক হয়। তারপর যত রোজ মশাটি বেঁচে থাকবে তত রোজ পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াতে পারবে। এছাড়াও জীবাণু বহনকারী ওই মশা যত ডিম পারে, তার সবগুলোতেই ভাইরাস থেকে যায়। আর ওই ডিম যদি প্রকৃতিতে অনুকূল পরিবেশ পায় তবে সেখান থেকে জন্মানো মশার কামড়েও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে পারে। 

 এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশন। এভাবে ভাইরাসের বাহক হয়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু মশা জন্মাতে পারে বলে জানান কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। ৮. ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ? ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি কেবল মাত্র মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। মানব থেকে মানুষে ছড়ায় না। অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে অথবা তার ব্যবহার কিছু ব্যবহার করলে, ভিন্ন ভিন্ন কারো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এডিস মশা ব্যতীত স্পর্শ অথবা ভিন্ন ভিন্ন কোনোভাবে এই রোগ ছড়ানোর উপায় নেই। এমনকি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মশার মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়ায় না। ৯. ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে? গুগলে প্রচুর মানুষকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেখা গেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বরের পাশে গোসলের কোনো সম্পর্ক নেই। 

 অন্য যেকোনো জ্বরের মতো ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও জ্বর হলে গোসল করা যাবে। তবে প্রচুর প্রচুর জ্বর হলে অনেকের ঠান্ডা লাগে। তবে কুসুম গরম জল দিয়ে গোসল করা অথবা গোসলের পর জলদি চুল শুকিয়ে ফেলার মতো বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। এছাড়া শরীরের তাপমাত্রা প্রচুর প্রচুর থাকলে তা কমাতে গা মোছানো ও মাথা ধুয়ে দেয়া যেতে পারে। ১০. ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ : জ্বর থাকবে। শরীরে কষ্ট বিশেষত জয়েন্টে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা। শরীরে লালচে র‍্যাশ। 

পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া। বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া। কাশি। ক্ষুধামন্দা। অস্বাভাবিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি। শরীরের বিচিত্র জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ (মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো রঙের পায়খানা, মাসিকে অনেক রক্তপাত)। 

রক্তচাপ কমে যাওয়া, পালস রেট বেড়ে যাওয়া। এখন যে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রচুর বেশি, ডেঙ্গুর ধরনও বারবার পরিবর্তন হচ্ছে। অতএব কারো জ্বর হলে ডেঙ্গুর লক্ষণের অপেক্ষা না করে জলদি চিকিৎসকের নিকটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

 ১১. ডেঙ্গু হলে কী খাবার খেতে হয়? ডেঙ্গু হলে রোগীকে স্বাভাবিক সকল ধরনের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে জল স্বল্পতা হয়। অতএব এ সময় তরল জাতীয় খাবার প্রচুর খাওয়াতে হয়। একই পাশে বাড়িতে ফল থেকে বের করা জুস, স্যুপ, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন অথবা ভিন্ন ভিন্ন তরল খাবার অনেক পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। 

 এগুলো শরীরের জল আর ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে মঙ্গল করবে। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাদ্যে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘খাবারের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে, অনেককে দেখেছি দিনে ১০ থেকে ১২টা ডাব খেতে, অনেকে লিটারে লিটারে জল খাচ্ছে এগুলো অস্বাভাবিক।

পুনরায় কিছু না করাও সঠিক না। যদি কারো দিনে তিন চার ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের রঙ হলুদ না হয়, তারমানে তার আর্দ্রতা স্বাভাবিক আছে। একে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url