ক্যানসারের ধাক্কায় শ্রবণশক্তিরও ক্ষতি হতে পারে
চার বছর পূর্বে সমস্যা আরম্ভ হয়েছিল। ফ্লোরিয়ান ভাগনার এক কানে প্রায় কিছুই শুনতে পারছিলেন না। ২৩ বছর বয়সি মানুষটি আপন শ্রবণযন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে উনি বলেন, ‘আমি ঘরে বসে এক মুভি দেখছিলাম। কোনো এক সময়ে বাম কানে শুনতে পারছিলাম না। পরের দিনই ইএনটি ডাক্তারের নিকটে গেলাম। উনি পূর্বে আমাকে এক কর্টিসন ইনফিউশন দিলেন। কয়েক রোজ পর পুনরায় একই সমস্যা হলো। সেসময় এবং কর্টিসনে কোনো কার্য হলো না।’
ফ্লোরিয়ান হিয়ারিং এইড ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পর ভিন্ন ভিন্ন কানেও সমস্যা দেখা দিল। উনি প্রায় পুরোপুরি বধির হয়ে গিয়েছিলেন।
অ্যাকোস্টিক ট্রমা ও কানের ভেতরের রোগ বধিরতার কারণ হতে পারে। কিন্তু ফ্লোরিয়ানের ক্ষেত্রে ক্যানসারের কেমোথেরাপি চিকিৎসা এই সমস্যার জন্য দায়ী।
মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের শিক্ষক নিকোল রটার বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত কেমোথেরাপির ওষুধেরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। এই রোগীর কেমোথেরাপির সময় অটোটক্সিক এফেক্ট অন্যতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ অন্তঃকর্ণের কোষ, যা এইচ-সেল নামে পরিচিত, ওখানে ক্ষতিকর প্রভাব ঘটেছে।
মোদের অডিটারি কোকলিয়ার মধ্যে সেই কোষ থাকে। সেই কোষের বিপাকে বিঘ্ন ঘটে। সেসময় কোষগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়।’
ফ্লোরিয়ানের নিকটে কেবল আশার কিরণ ছিল কোক্লিয়ার হিয়ারিং ইমপ্লান্ট। এই মুহূর্তে তার মাথার দুই পাশেই সে দু’টি ভালো করে বসানো আছে।
মাথার সঠিক বাইরের অংশে অডিও প্রসেসর ধ্বনি গ্রহণ করে ত্বকের নিম্নে ইমপ্লান্টে পাঠিয়ে দেয়।
এরপর নমনীয় এক ইলেকট্রোডের বদলে সেই ধ্বনি ক্ষতিগ্রস্ত কোক্লিয়ায় পৌঁছে যায়। ওখানে অডিটারি খবর বৈদ্যুতিক স্পন্দনের রূপে সংশ্লিষ্ট স্নায়ু তথা মস্তিষ্কে প্রেরণ করা হয়।
অপারেশনের কয়েক সপ্তাহ পরেই কোক্লিয়ার ইমপ্লান্টের কল্যাণে ফ্লোরিয়ান ভাগনার পুনরায় শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন। তবে এখনো তাকে অন্যের বচন বোঝার জন্য স্পিচ কম্প্রিহেনশন ট্রেনিং নিতে হচ্ছে। বর্তমানে উনি ভলিউমের মাত্রা অনুযায়ী ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বচন বুঝতে পারছেন।
প্রফেসর রটার বলেন, ‘কোক্লিয়ার ইমপ্লান্টের বদলে শোনা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার তুলনায় একেবারে ভিন্ন। কারণ ইমপ্লান্ট ডায়রেক বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় অডিটারি স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে। সেইসাথে কোক্লিয়ার ইমপ্লান্টের সেটিংও জরুরি। ভলিউম অত্যন্ত প্রচুর হলে রোগীর প্রচুর অস্বস্তি হবে। অপরদিকে ভলিউমের মাত্রা যথেষ্ট না রাখলে পুনরায় ইমপ্লান্টের বদলে বচন ঠিকমতো বোঝা যাবে না।’
ফ্লোরিয়ান ইমপ্লান্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রযুক্তির বদৌলতে শ্রবণশক্তির উন্নতিও তার পছন্দ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মোবাইলে গান চালাতে পারি। সেই সিগন্যাল ডায়রেক ইমপ্লান্টের মধ্যে চলে যায়। ফোনে মুভি দেখলেও সাউন্ড ওখানে যায়। মোবাইলটিকে আমি মাইক্রোফোন হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি। যেমন ধরুন রেস্তোরাঁয় বসলে প্রচুর মানব আমার পাশে বচন বললে সেটা করি। ফোন টেবিলে রাখি। সকল বচন ফোনে রেকর্ড হয়ে আমার ইমপ্লান্টেড ডিভাইসে পৌঁছে যায়।’
শ্রবণশক্তি হারানোর পর ফ্লোরিয়ান পুনরায় এক মিউজিকাল দেখতে চান। ইমপ্লান্ট ও মোবাইলের বদলে সবকিছু ঠিকমতো শুনতে পারবেন বলে তার আশা।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url